বান্দরবানের অপরূপ প্রকৃতির মাঝে নির্মিত দেশের সবচেয়ে উঁচু ‘আলীকদম-থানচি সড়ক’ এর বর্ণনা কারো পক্ষে সহজে দেয়া সম্ভব নয়। অবর্ণনীয় সবুজ প্রকৃতির মাঝে আরেক বিস্ময় সড়কটির ২২ কিলোমিটার পয়েন্টে অবস্থিত ‘ডিম পাহাড়’।
৩৩ কিলোমিটার সবুজাভ পাহাড়ে আঁকাবাঁকা সর্পিল পথ। ঘনসবুজ পাহাড়ের পাথুরে ঢালে বয়ে চলছে ঝর্ণাধারা। কল্কল্ শব্দে ঝরে এসব ঝর্ণার শীতল জল। অন্যদিকে ডিম পাহাড় এলাকায় দাড়িয়ে ছোঁয়া যায় আকাশের সাদা মেঘ!
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট উঁচু বান্দরবানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে ভ্রমণ পিপাসুদের মাঝে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে বান্দরবানের ডিমপাহাড় । তবে ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথের মাঝখানে থাকা ‘ডিমপহাড়’ এলাকাটি পর্যটকদের বেশি নজর কাড়ছে। । হক্কানী দরবারের পরিচালক এম খালিদ হোসাইন সিপাহী, সাংবাদিক নাজমূলসহ অত্র অঞ্চলে একটি টিম পরিদর্শন করেন। দর্শকরা স্থানটিতে ভ্রমন করে মুগ্ধ হন।
দেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের ওপর থানচি-আলীকদম সড়কের মাঝপথে অবস্থিত ডিমপাহাড় এলাকাটি জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে শুরু করেছে। কারণ পুরো ৩৩ কিলোমিটার সড়কপথ জুড়েই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি। রকমারী ফুল-ফলে আচ্ছাদিত সবুজ গাছ-গাছালিতে ঠাঁসা এই সড়ক পথ। পিচঢালাই আঁকা-বাঁকা পথে এসব দৃশ্য দেখে ভ্রমণপিপাসুরা মনের ভেতর স্পন্দন খুঁজে পান। পুরো সড়কপথের সাথে যোগ হয়েছে সবুজপাহাড় আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ছোট-ছোট পাড়া, গ্রামগুলোর বৈচিত্র্যময় মানুষের জীবনধারা ও পথচলা। তবে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এখনও বিপদমুক্ত নয়।
দেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আলীকদম-থানচি সড়কের ‘ডিম পাহাড়’। প্রকৃতির অনাবিল সৌর্ন্দয আর বৈচিত্র্যময় পরিবেশে এ যেন প্রকৃতির দান! পাহাড়ের বুকে ৩৩ কিলোমিটার এ সড়কপথে যাত্রা নয়, বলা যায় রোমাঞ্চও। ডিম পাহাড়ে যাওয়ার রাস্তাটির বিশেষত্ব হচ্ছে এটি দেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক। আলীকদম থেকে এই রাস্তা ওপরের দিকে উঠেছে এবং ডিম পাহাড়ের কাছাকাছি রাস্তার উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ২৫০০ ফুট।
শ্রাবণের এই ঘন বর্ষায় ডিম পাহাড় এলাকাটি থাকে সাদা মেঘে আচ্ছন্ন। যেন মেঘের ওপরে সড়ক! সেখানে গেলে পর্যটকরা পান আকাশের মেঘ ছোঁয়ার অভিজ্ঞতা! বর্ষায় ভ্রমণে রাস্তার অর্ধেকটাজুড়ে সাদা মেঘ আপনার সঙ্গী হবে বারবার। কাছে এসে যেন দূরে চলে যায় মেঘদল। আবার মেঘদল যেন বলে দেয় এখানে পথ হারালে ফিরে যাওয়া হবে কঠিন! ডিম পাহাড় এলাকাটি সবুজের চেয়েও সবুজ। পাহাড়ি রাস্তার ধারে ধারে ফুটে আছে নানা রঙের পাহাড়ি ফুল। পর্যটকদের যেন মনে করিয়ে দেয় জাতীয় কবির ‘ছন্দে ছন্দে দুলে আনন্দে আমি বন ফুল গো’ গানের কলি। মেঘের ফাঁকে রোদের ঝিলিক বৃষ্টিভেজা ফুলগুলো উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে!
১৯৯৯ সালে এ সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রথম দুই বছরে মাত্র ৬ কিলোমিটার নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। এরপর সংস্থাটি জানিয়ে দেয়, পাহাড়ের চূঁড়ায় সড়ক বানানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ২০০১ সালে সেনাবাহিনী এ সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব পায়। হেলিকপ্টারে করে সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্য পথ নির্ধারণ করা হয়। পাহাড়ের পর পাহাড়ের গা কেটে তৈরি হয় পথ। এ সড়ককে ঘিরে একে একে সন্ধান মিলছে অসংখ্য ঝিরিনির্ঝর, ঝরণা, জলপ্রপাত ও আর সুউচ্চ পাহাড়।
আলীকদম-থানচি সড়ক নির্মাণের আগে কক্সবাজার, আলীকদম, লামা ও রুমা থেকে থানচি যেতে হতো বান্দরবান ঘুরে। থানচি থেকে যেতেও একই পথ ব্যবহার করতে হতো। প্রতিবেশী আলীকদম-থানচির দুরত্ব ছিল ১৯০ কিলোমিটার। সড়ক নির্মাণের পর দুই উপজেলার দূরত্ব এখন ৩৩ কিলোমিটার। সাম্প্রতিক ভারি বর্ষণে পর্যটকবান্ধব এ সড়কটির একাধিক পয়েন্টে রাস্তা ধসে গেছে। তবে মোটর বাইক নিয়ে এখনো চলাচল করা যাচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা পর্যটকদের নিরাপত্তা বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কের পাশে পৃথকস্থানে স্থাপিত নিরাপত্তা চৌকিসমুহে যাতায়াতকারী পর্যটকসহ যাত্রীবহনকারী যানবাহনগুলোর চালক এবং যাত্রীদের জরুরি মোবাইল নাম্বাসহ ডাটা লিপিবদ্ধ করা হয়। যাতে করে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়। যাতে পর্যটকরা সমস্যায় না পড়েন তার জন্য গাইডের ব্যবস্থাও রয়েছে।
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা সদর থেকে আলীকদম-থানচি সড়কপথে যাবার সময় লামা উপজেলার টপহিল মিরিন্জা পর্যটন কেন্দ্র এবং আলীকদম উপজেলা সদরের কাছে পর্যটন কেন্দ্র আলী ছড়ংগ দর্শনের সুযোগ পাবেন। জেলা সদর হয়ে থানচি-আলীকদম সড়কপথ ভ্রমণে গেলে দর্শনীয় স্থান প্রান্তিক লেক, নীলাচল, রাজবাড়ি, শৈলপ্রভাত, চিম্বুক পাহাড়, জিয়া পুকুর, সুভ্রনীলা, নিলগিরি এবং জীবননগর অবলোকনের সুযোগ রয়েছে। এখন পর্যটকদের ভ্রমণ মৌসুম না হওয়া সত্বেও প্রতিদিনই বিশেষ করে শুক্রবার-শনিবারসহ সরকারি বন্ধের দিন বিপুল পর্যটকের সমাগম ঘটছে বান্দরবানে।
লেখক,
পরিচালক, হক্কানী দরবার।
এ জাতীয় আরো খবর ....